Saturday, September 28, 2019

মেহনতি সরকারের মেহনতি হত্যা(মরিচঝাঁপি)



তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি।। এই স্লোগান টি এখন অহরহ শোনা যাচ্ছে বাংলায়।। শুনতে খুব ভালো লাগছে। তবে বাস্তবিক দিক দিয়ে একটু পিছনে যদি যাই তাহলে একটা ঘটনার কথা মনে পরে।। মানে একটা জাতি নিজস্ব সংস্কৃতি হয়েও নিজ জাতির লোক হয়ে ওঠা হল না।। মরিচ ঝাঁপি। হ্যাঁ এক বাঙালি জাতির কালো অধ্যায়।  আবার স্মৃতি চারন  । মরিচ ঝাঁপি হত্যার  শিশু আজ যুবক , সেদিনের যুবক আজ বৃদ্ধ আর সেদিনের বৃদ্ধ আজ প্রয়াত। মরিচ জাতির সেই 30 হাজার জনগন কিন্তু মানুষ ছিল । ভারতের নাগরিক ছিল , উদ্বাস্তু হিসেবে এসেছিল , চোর গুন্ডা বদমাশ জঙ্গি ছিল না , " । তবুও তারা রাষ্ট্রীয় দমনের শিকার হল কেন?
তার আগে একটা গান মনে পড়লো ,

 "বড়ো আশা করে এসেছিগো  হিন্দু ভূমিলয়ে" ফিরায়না না বামনি" (টিকিয়ালা নয়)
 এবার আসি আসল কথায়

মরিচঝাঁপি অঞ্চলের মানুষেরা রোহিঙ্গাদের মত কোন বেআইনি লড়াই বা আন্দোলন কিংবা সরকারের টাকায় বসে খাওয়ার মনস্থির করে নি । তারা নিজেদের প্রচেষ্টায় কুটির শিল্প, হস্তশিল্প, স্বনির্ভর প্রকল্প, বিদ্যালয় ,নৌকা বানানো, নলকূপ বসানো, হাসপাতাল , সুন্দর বাসস্থান গড়ে তুলেছিল। শোনা যায় তারা নাকি জলের নোনা ভাগ দেখেই বলে দিতে পারতো মাছ চাষের অবস্থা। মাটি দেখে বলতে পারতো এখানে ফলন কেমন হবে।। কিন্তু ওই শাসক শ্রেণীর কাছে সেটা অপ্রিয় হয়ে ওঠে , কারন তখন ছিল মেহনতি মানুষের সরকার।। কিন্তু এই দ্বীপের মানুষ জন যেহেতু এই মেহনতি সরকার ছাড়াই নিজের মেহনতি তে অঞ্চলের উন্নতি করে তাই হয়তো সরকার পক্ষের কাছে ভালো লাগে নি।। 

সরকার অভিযোগ তুললো যে মরিচ ঝাঁপি অঞ্চল বন সংরক্ষণ এর আয়তায় পড়ছে।  এখানে বসবাস করা যাবে না। আর এই অভিযোগ আসে যে মরিচ ঝাঁপির উদ্বাস্তু রা নাকি জঙ্গলের গাছ পালা ক্ষতি করছে , তারা নাকি বেআইনি ভাবে কাঠ বিক্রি করছে। অথচ এই অঞ্চল টি বন সংরক্ষণ এর অঞ্চলে ছিল না।
সেদিন তারা আইনি পথেই লড়েছিল।, সেখানকার আক্রান্ত ও উদ্বাস্তু সংগ্রামী দেবব্রত বিস্বাস , আমরা বাঙালি সংগঠন, উদ্বাস্তু সমিতি সংগঠন এর তরফের আইনজীবী সাক্য সেন একটি আইনি চিঠি পাঠান 8 টি জায়গায়, ত্রাণ মন্ত্রণালয়,  প্রধান সেক্রেটারি  পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী , পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র দপ্তরে, সুপেরিটেন্ডেন্ট পুলিশ দপ্তর সহ আরো অনেক।।
চিঠি তে বলা হয়।
1 গোসাবা থানার নেতাজি নগর যা মরিচঝাঁপি হিসাবে পরিচিত , এখানকার মানুষ 1978 থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে। 
2  1978 থেকে সরকার কোন আইনের পথ না মেনে ভারতীয় সংবিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে অবৈধ ভাবে সেখানকার মানুষদের অত্যাচার করছে।
3 রীতি মত যুদ্ধকালীন পরিবেশ চালানো হচ্ছে। ভাঙা নৌকা ডুবন্ত নৌকা থেকে নারী ও শিশু দের বাঁচাতে এগিয়ে আসা স্থানীয় বাসিন্দা দের উপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হচ্ছে, খাদ্য , জল আর ব্যবসা পাতি পুলিশ ও লঞ্চ দিয়ে ঘেরাও করে আটকে রাখা হয়েছে।। ঠান্ডা মাথায় খুনের সাথে গন হত্যার পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
নিজেদের পুনর্বাসনের জন্য অঞ্চলের প্রকৃতি ও পরিবেশ কোন ক্ষতি না করে তারা অল্প সময়ে মধ্যেই গড়ে তুলেছিল , চাষের যন্ত্রপাতি জন্যে কামারশালা, মাতুর বাসনকসন তৈরির কুমারের চাক, কাপড় বোনার তাঁত, বিড়ি মিষ্টান্ন আর রুটি তৈরির ব্যবস্থা, বাঁশের ঝুড়ির হস্তশিল্প , গড়ে তুলেছিল মাছ চাষ , ভেড়ি , পশুপালন , আনাজ সবজির জন্য ছোট বাগান, বিদ্যালয়, ডাক্তার খান চারটি , দুটো বাজার।
মামলা আবেদনকারীরা প্রয়োজনে সব কর্ম কাণ্ডের ফটো আদালতে দেখাতে চেয়েছিল । এই ফটো তে প্রমান হত যে জঙ্গলে সরকারের ক্যসূরিনা, বন সৃজন ,তাল গাছ নারকেল বাগান এইগুলোর কোন ক্ষতি হচ্ছিল না বরঞ্চ বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
অথচ রাজ্য সরকার এর আইন কে তোয়াক্কা না করে 30 হাজার মানুষ কে, শিশু, অসুস্থ রোগীদের খাদ্য পানীয় ওষুধ , প্রয়োজনীয় দ্রব্য ঘেরাও করে আটকিয়ে দিয়ে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

এই চিঠিতে মরিচ ঝাঁপি বাসিন্দাদের পক্ষে দাবি তোলা হয়েছিল । স্পিড বোট গুলো সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল , সমস্ত অবরোধ তুলে নেওয়া, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তুলে নেওয়া বেবস্থা করা। , মরিচ ঝাঁপি বাসিন্দাদের শান্তিপূর্ণ ভাবে ব্যবসাপটি ও পুনর্বাসন কাজকর্ম বাধাহীনভাবে চালিয়ে যেতে দেওয়া হয়।।  
দাবি গুলোর মাধ্যমে সরকার কে 24 ঘন্টা সময় দেওয়া হয়।। কিন্তু 24 ঘন্টা কেটে গেলেও সরকার কোন উত্তর দেয় নি। তাই বাধ্য হয়ে মরিচঝাঁপির আক্রান্ত বাসিন্দারা তাদের সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার রক্ষার জন্য ভারতীয় 226 ধারা অনুযায়ী কলকাতা হাইকোর্ট এ মামলা করে।
এই মামলার ভিত্তিতে হাইকোর্ট মরিচঝাঁপি পক্ষের আইনজীবীকে এলাকা পরিদর্শনে আদেশ দেয়। 
আইন জীবীরা সেখানে পৌঁছে দেখল এক যুদ্ধে ঘটে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ। একটি পাথরের উপর শাঁখা ভাঙা পরে আছে, নিশ্চয় কোন মহিলকর উপর বল প্রয়োগ করা হয়েছে ।স্কুলের আসবাব পত্র ভেঙে পরে আছে।  ঘর বাড়ি গুলো সম্পুর্ন ভেঙে গেছে , ডাক্তার খানা টি ধ্বংস হয়ে গেছে।।  আজাদ হিন্দ হাসপাতাল আগুনে পোড়ানো হয়েছে। বাজারের বহু চালাঘর দোকান আগুনে পোড়ানো হয়েছে। এই অঞ্চলের বিড়ি ও রুটি কারখানা সরকার পক্ষের দল লুট করে নিয়েছে।। তারা বাসিন্দাদের কাছে শুনছিলেন তাদের করুন কাহিনী।। কিভাবে তাদের ওপর পুলিশ ও গুন্ডা অত্যাচার চালিয়েছে হত্যা ও ধর্ষণ করেছে।।বলে রাখি হতাহতের সংখ্যা ছিল শিশু নর নারী সমেত 7000।   আইনজীবী রা ঘটনার ছবি তুলতে গেলে পুলিশ হটাৎ ই বাঁধা দেয়। তাদের ফটো তুলতে নিষেধ করে। কিন্তু আইন জীবীরা ও কোর্টের নির্দেশনামা দেখালেন।। কিন্তু তাতেও তারা মানলেন। কার্যত এই যাত্রা ঠিক ঠাক সফল হল না।। 
এর পর কোর্টে শুরু হল মরিচঝাঁপি মানুষদের মানবাধিকার এর জন্য লড়াই।। মরিচঝাঁপি বাসিন্দার পক্ষের আইনজীবী তার উপযুক্ত তথ্য পেশ করলো , আর বিরোধী সরকার পক্ষের আইন জীবী নারায়ণ গুপ্ত ছিল।। সরকার পক্ষের আইনজীবী এলাকাটিকে বনসংরক্ষন এর জন্য সংরক্ষিত বলে আদালতে পেশ করতে লাগলো।। একটি 26 ধারার দীর্ঘ বয়ান দিয়ে সরকারের পদক্ষেপ গুলো কে সমর্থন দিল।। ব। এর উপর ভিত্তি করে বিচারপতি তার শেষ রায়ে সরকার পক্ষের হয়েই দাঁড়ালো।। মরিচঝাঁপি বাসিন্দারা হেরে গেল।। তাদের উপর ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সু বিচার পাওয়া হল না। এই এভাবে এক রক্তাক্ত ইতিহাসের সমাপ্তি হল। শোনা যায় সুন্দর বনের নরখাদক বাঘ নাকি এই মরিচ ঝাঁপি বাসিন্দাদের মাংস খেয়েই নরখাদক হয়।  কারন সরকারের পুলিশ ও গুন্ডাবাহিনী বাসিন্দাদের হত্যা ,করে তাদের লাশ গুম করার জন্য বাঘের কাছে ছেড়ে আসতো। শিশুদের কুমিরের মুখে ছেড়ে আসতো।  কয়েক দল সাংবাদিক এই অত্যাচারের কাহিনী দেখে বলেছিলেন নিজেদের কমিউনিস্ট বলে দাবি করুক বা অন্য কিছু। সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষ কখন নিচু দলের মানুষের প্রতিনিধি হতে পারে না। বামপন্থি দল তারা কথায় কথায় গরিবের পক্ষে ধর্ণা তোলে। সর্বহারা মানুষদের জন্য তারা দিন রাত আন্দোলন করে যায়। কিন্তু ক্ষমতায় এসে সে গরিব সর্বহারা দের সরকার ই আবার ওই সব মানুষদের উপর বেশি শোষণ করে। প্রশ্ন জাগে যেই বামপন্থি সরকার প্যালেস্টাইনে উদ্বাস্তু অধিকার নিয়ে কথা বলে । তারাই আবার কি করে বাঙালি উদ্বাস্তু দের অধিকার হরণ করে।।  সাধে বলে এই উপমহাদেশের সবচেয়ে সুবিধাবাদী তারাই।।।  একটা জাতি বাঙালি হয়েও বাঙালি হয়ে উঠলোনা।।

তথ্য সূত্র  (খুব শক্তিশালী নয় কারন সরকার স্বৈরাচারী হলে তার পক্ষে প্রমান জোগাড় করা মুশকিল হয়ে পরে)



 বিশদ জানতে এই বইটি পড়তে পারেন

 বাসিন্দারা কাঠের নৌকা বানাচ্ছে 

 সাম্প্রতিক কালের কিছু  সংবাদ মাধ্যমের খবর 

Times of i

The wire

Hindustan times

মরিচঝাঁপি বাসিন্দাদের মুখে শুনুন









উদ্বাস্তু তরফের আইন জীবী রা কি বলেন

No comments:

Post a Comment

আজীবিক ধর্ম

মুখবন্ধ -- হিন্দু ধর্মে বর্নবৈষম্য ও ব্রাহ্মণ বাদের অত্যাচার এর কারনে ভারতে বিভিন্ন সময় ধর্ম আন্দোলন কিংবা ভক্তিবাদী আন্দোলন ঘটে।। কেউ ...