মুখবন্ধ --
হিন্দু ধর্মে বর্নবৈষম্য ও ব্রাহ্মণ বাদের অত্যাচার এর কারনে ভারতে বিভিন্ন সময় ধর্ম আন্দোলন কিংবা ভক্তিবাদী আন্দোলন ঘটে।। কেউ কেউ সরাসরি ধর্মের বিরোধিতা করে আবার কেউ কেউ ধর্মের কিছু দর্শন গ্রহণ ও পরিত্যাগ করে নিজেদের মত ধর্মের বা মতবাদের আবির্ভাব ঘটায়।। আপনারা বৌদ্ধ জৈন ধর্মের নাম অনেক শুনেছেন।।
হিন্দু ধর্মে বর্নবৈষম্য ও ব্রাহ্মণ বাদের অত্যাচার এর কারনে ভারতে বিভিন্ন সময় ধর্ম আন্দোলন কিংবা ভক্তিবাদী আন্দোলন ঘটে।। কেউ কেউ সরাসরি ধর্মের বিরোধিতা করে আবার কেউ কেউ ধর্মের কিছু দর্শন গ্রহণ ও পরিত্যাগ করে নিজেদের মত ধর্মের বা মতবাদের আবির্ভাব ঘটায়।। আপনারা বৌদ্ধ জৈন ধর্মের নাম অনেক শুনেছেন।।
![]() |
আজীবিক দের গুহা |
![]() |
বিহারের বার্বারায় আজীবিক দের গুহা |
![]() |
আজীবিক |
উৎস
ষষ্ঠ শতকে উত্তর ভারতের ব্রাহ্মণ ধর্মের বিরুদ্ধে বহু প্রতিবাদী ধর্ম মতের উদ্ভব এগুলি সংখ্যা ছিল আনুমানিক 60 বা তার বেশি এদের মধ্যে আজীবিক ধর্ম বেশ জনপ্রিয় ছিল অশোকের শিলালিপি থেকে এ কথা জানা যায় গুপ্ত যুগে ও আজীবিক দের গুহার কথা জানা যায় । আজীবিক ধর্মের প্রবক্তা ছিলেন গোশালমংখলিপুত্ত। জৈন ধর্মের প্রবর্তক বর্ধমান মহাবীর এর সমসাময়িক ছিলেন। আজিবিক দের কোন ধর্মীয় গ্রন্থ পাওয়া যায় নি।। এই ধর্মের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানা যায় বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে।
আজীবিক দর্শন -
আজিবিক ধর্ম বিশ্বাসে নাস্তিক্যবাদ এর প্রভাব বিশেষভাবে দেখা যায় । তারাও চার্বাক দের মত যাগ-যজ্ঞ , দেব দেবী পুজোর কোন নিয়ম মানত না। আজিবিক দের বিস্বাস ছিল যে মানুষের কর্মফল হল অখন্ডনীয়। তারা আত্মায় বিস্বাস করতো। তাদের মধ্যে জন্মান্তর বাদ টাও ছিল।। আজীবিকরা বিস্বাস করতো যে মানুষ বহু জন্ম সৎভাবে কাটাতে পারলে তবে নিয়তি বা কর্মফল হাত থেকে নিস্তার পেতে পারে। এমনকি তাদের মতে পন্ডিত , মূর্খ , গরিব ধনী নির্বিশেষে সবাইকে মোট 84 লক্ষ বার জন্ম গ্রহণ করতে হবে। একটি একটি করে জীবনচক্র অতিক্রম করার পর অবশেষে জীবের দুঃখের অবসান হয়। এজন্য আজীবিক রা সন্ন্যাস তপস্যাকৃত জ্ঞান চর্চার ওপর বিশেষ জোর দেয়। ব্রাহ্মণ ও শূদ্র সকলেই কর্মফলের অধীন। অর্থাৎ তারা বর্ণপ্রথা এ বিশ্বাসী ছিলেন। আজীবিক ধর্ম ছিল হতাশা থেকে জাত এবং নেতিবাচক। বৌদ্ধ ধর্মের মত এখানে ইতিবাচক ছিল না। এতে অদৃষ্টবাদ ছিল বড়ই প্রবল মানুষের কর্ম ও উদ্যম এতে শিথিল হয়ে যেত ।
আজীবিক ধর্মের প্রভাব-
আজীবিক দের কোন ধর্মগ্রন্থ পাওয়া যায়নি। বৌদ্ধ ও জৈন শাস্ত্রে আজীবিক সম্পর্কে যা বলা আছে তার থেকে আজীবিক দের সম্পর্কে আমরা জানতে পারি প্রথমদিকে আজীবিক দের প্রধান কর্ম কেন্দ্র ছিল অবন্তি ও অঙ্গ মধ্যবর্তী অঞ্চল । মৌর্য সম্রাট অশোক ও দশরথ জন্য গুহা নির্মাণ করেন। তাছাড়া অশোকের শিলালিপি দিয়েও তাদের সম্পর্কে জানা যায়। এই শিলালিপিতে তাদের প্রতি সৎ আচরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজীবিক রা মূলত জাতিভেদ ও শ্রেণীভেদ এর সমালোচনা করার ফলে নিম্নবর্ণের লোকেদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়। শূদ্র ও অস্পৃশ্য এই ধর্মের অনুগত হয়ে পড়েন। এখানে বলে রাখি যারা অধিক অত্যাচারিত হয় এই শূদ্র ও অস্পৃশ্য তারাই ভারতবর্ষে যখন ই নতুন কোন ধর্মের উদ্ভব হয়েছে । তারা সেদিকেই ধাবিত হয়েছে। পূর্বে জৈন বৌদ্ধ আজীবিক থেকে বর্তমানে খ্রিস্ট ও ইসলাম ধর্ম ।
পতন-
বৌদ্ধ ও জৈন দের তীব্র বিরোধিতার ফলে আজীবিক ধর্মের বিলুপ্তি ঘটে। আজীবিক রা নাস্তিক্যবাদি হলেও মানুষের কর্মফল ও জন্মান্তর সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ না করায় এই ধর্মের জনপ্রিয়তা বৌদ্ধ ধর্মের তুলনায় কমে যায়। সম্রাট অশোক যখন বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে তখন আজীবিক দের হত্যা করার আদেশ দেয় । প্রায় 18 হাজার এর মত আজীবিক দের উৎখাত করা হয় তাদের ভূমি থেকে(যদিও এই এটি বিতর্কিত ও অপ্রামানিক)। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে নবজাগ্রত বৈষ্ণব ধর্মের মধ্যে খুব সম্ভবত আজীবিক ধর্ম বিলীন হয়ে গিয়েছিল। আজীবিক ধর্মের প্রবর্তক গোশালমংখলিপুত্ত মৃত্যু ঘটে 484 খ্রিস্ট পূর্বে।
https://books.google.co.in/books?id=BiGQzc5lRGYC&pg=PA157&redir_esc=y#v=onepage&q&f=false
No comments:
Post a Comment